দেশে করোনায় ষাটোর্ধ্বদের আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে বয়সজনিত বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকার কারণে এই গ্রুপে মৃত্যুর হার বেশি।
বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমগুলোর মান খুব বেশি ভালো নয়। প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মতো খুব অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সরকারের ভর্তুকির সাহায্যে আবাসন ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
সবগুলো কেয়ার হোম স্বেচ্ছায় স্থাপন করা হয়েছে। বৃদ্ধাশ্রম এবং তাদের বাসিন্দাদের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই। তহবিল সংকটের কারণে এই কেয়ার হোমগুলো তাদের বাসিন্দাদের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে ফেলে দিচ্ছে।
দাতব্য সংস্থা পরিচালিত ‘আপন নিবাস’ বৃদ্ধাশ্রম ঢাকার উত্তর খানের ময়নারটেকে অবস্থিত।
এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা সেলিনা শেলি ইউএনবিকে জানান, তিনি গৃহহীন বৃদ্ধ নারীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
আপন নিবাসে বর্তমানে ৭৫ জন বাসিন্দা রয়েছেন - তাদের অনেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী।
‘প্রথমদিকে, আমি আমার চাকরি থেকে যা আয় করতাম তার সাহায্যে বৃদ্ধাশ্রমটি পরিচালনা করতাম। পরে স্থানীয়রা এবং মাঝে মাঝে কিছু ধনী ব্যক্তি ও বেসরকারি সংস্থা আমাদের সহায়তা করে আসছিল,’ তিনি বলেন।
কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং বাংলাদেশকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করার পর সহায়তা কমে গেছে, শেলি বলেন।
সাধারণ ছুটি ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়। পরবর্তীতে তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু বর্তমানে ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ছুটি এবং মানুষের চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ মে পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
শেলি বলেন, তিনি আপন নিবাসের বাসিন্দাদের নিয়ে চিন্তিত। কারণ সেখানে সবার বয়স ৬০ বা তারও বেশি।
আরেকটি বৃদ্ধাশ্রম - বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র - গাজীপুরে অবস্থিত। এটি ১৯৮৭ সালে গিভনসি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক খতিব আবদুল জাহিদ মুকুল প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাথমিকভাবে, এটি ৬০ বছরের বা তার বেশি বয়সের অসহায় বয়স্ক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষ্যে একটি ভাড়া জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। পরে এটি ১৯৯৪ সালে গাজীপুরের মনিপুর, বিশিয়া, কুড়িবাড়িতে প্রায় ১০০ বিঘা নিজস্ব জমিতে স্থানান্তর করা হয়।
যদিও ‘বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র’ কোনো আর্থিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে না, তবে কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কারণ এখানে বসবাস করা ১৮৪ জন প্রবীণ পুরুষ এবং নারী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে, কেন্দ্রটিতে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের ১২০০ প্রবীণ নাগরিকের থাকার ব্যবস্থা আছে।
কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম ইউএনবিকে বলেন, তারা এখানকার বাসিন্দাদের সুরক্ষার জন্য এই কেন্দ্রটি ২০ মার্চ লকডাউন করে।
তিনি বলেন, তারা বয়স্ক বাসিন্দাদের জন্য উদ্বিগ্ন, যাদের অনেকেরই শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
ঢাকার একমাত্র বৃদ্ধাশ্রম ‘প্রবীণ ভবন’ ১৯৬০ সালে আগারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদানে পরিচালিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এখানে ২০০ বয়স্ক মানুষ থাকতে পারে।
যোগাযোগ করা হলে বৃদ্ধাশ্রমের উপ-পরিচালক (প্রশাসক) বদরুল আহসান বলেন, তারাও তাদের প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে চিন্তিত। ‘সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর থেকে আমরা কোনো দর্শনার্থীকে অনুমতি দিচ্ছি না,’ তিনি বলেন।
যদিও দেশে সরকারি মালিকানায় কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই, তবে ৮৫টি ‘শিশু পরিবার’ বা আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে প্রবীণ নাগরিকরাও থাকতে পারে।
প্রতিটি শিশু পরিবারে ১০ জন প্রবীণ নাগরিককে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে সমস্ত শিশু পরিবারকে প্রবীণ নাগরিকদের বিচ্ছিন্নভাবে রাখার এবং জরুরি কারণ ছাড়া যেন কেউ বাইরে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
‘আমরা সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত এবং জনগণকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি,’ বলেন ইসলাম।